বিদ্রোহী-মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আসছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

ডেস্ক রিপোর্ট :

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিদ্রোহীদের দমাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এতে একদিকে যেমন দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে পরাজিত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক দলীয় প্রার্থী। এতে বেড়েছে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা। হতাহত হয়েছেন অনেকে।

এমন পরিস্থিতিতে বিব্রত দলের নীতিনির্ধারণী মহল। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে বহিষ্কারও করা হয়েছে অনেককে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের তালিকা তৈরি করতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। এবার তাদের বিরদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের বিদ্রোহী এবং তাদের মদদদাতাদের তালিকা উপস্থাপন করবেন সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেখানে আলোচনার পর দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

একই সঙ্গে সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যাদের শোকজ করা হয়েছিল, তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি। পাশাপাশি বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও খুনাখুনি নিয়ন্ত্রণসহ দলের সাংগঠনিক কাজের গতি বাড়ানো, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্ত, আর্থসামাজিক ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে।

আগামী বছর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন এবং ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, তৃণমূলে বিভক্তির রাজনীতি দূরীকরণ, এমপি-মন্ত্রীদের বলয় ভাঙাসহ সাংগঠনিক নির্দেশনা দিতে পারেন সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনো চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে, সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক, যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না।

সূত্র জানায়, আজকের সভার এজেন্ডায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দেওয়া শোকজের জবাব নিয়ে আলোচনা এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার বিষয় রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কিত বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে এবং চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহ করছে এবং বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, বৈঠকের বেশ কিছু এজেন্ডা আছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সমানে আমাদের যে জাতীয় দিবসগুলো আছে, সেগুলোর কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা এবং দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছেন, সেসব বিদ্রোহী ও তাদের যারা মদদ দিয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। আমরা সেটা তৈরি করছি। কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সেগুলো উপস্থাপন করব।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে দেশব্যাপী চলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে। মূলত বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

দলের বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীপন্থিদের দাপটে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই হামলা-পালটা হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। ঘটছে প্রাণহানিও। এ কারণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে।

আরেকটি সূত্র বলছে, অনেক এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও সুপারিশ করেছেন অনেকে। এছাড়া বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাকি ধাপগুলোর জন্য দলীয় প্রতীকের প্রার্থিতায় উন্মুক্ত রাখা যায় কি না, এ বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। ওই বৈঠকে নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ওই প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তে উঠে আসে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, নেতায় নেতায় বিভক্তি, এমপি-মন্ত্রীদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতি, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন ও জামায়াত-বিএনপির নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ।